
আওরঙ্গজেব শিকদার :
জা. বির নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ ,চট্টগ্রাম হাটহাজারী কে. সি শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম, দুর্নীতি, ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষকদের প্রতি অসাধআচরণসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে হাটহাজারী কে সি শহীদ জিয়াউররহমান ডিগ্রী কলেজের ২২৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
এ সালে জুলাই বিপ্লবের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা অর্ধেকে বন্ধ হয়ে যায়। এ দুরবস্থায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড অর্ধেক পরীক্ষা গ্রহণ করে বাকি পরীক্ষা স্থগিত করেন। সংগত কারণে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এইচএসসি শিক্ষার্থীদের অর্ধেক পরীক্ষার ফি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দান করেন এবং এ টাকা সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদেরকে ফেরত প্রদান করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু কেসি শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস মিয়া এ কলেজের ২২৭ শিক্ষার্থীর ৪৪ হাজার ৫৬০ টাকা শিক্ষার্থীদেরকে না দিয়ে গোপনে আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষা অফিসে ছাত্র-ছাত্রীদের দেয়া অভিযোগে এ তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কুদ্দুস মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান ,এ টাকা দিয়ে কলেজের জন্য পানির পাত্র ক্রয় করা হয়েছে। অভিযোগে আরো জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আইসিটির শিক্ষক। গেল বছর অর্থাৎ ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অত্র কলেজ থেকে ১৬৫ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এ পরীক্ষায় অভ্যন্তরীন ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেন। এমনিভাবেএ বর্ষের শিক্ষার্থীরদের থেকে ৮২ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নেন।

একজন শিক্ষার্থী জানান, এ টাকা না দিলে আইসিটি স্যার ব্যবহারিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে দেবে হুমকি দেন। তাই তারাএ টাকা দিতে বাধ্য হলেন। এই বিষয় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া এ টাকা দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের এমন নিয়ম বা ব্যবস্থা নেই, যদি করে থাকেন নিয়মিত গর্হিত কাজ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারিক যে কোনো ফি গ্রহণ আইনতঃ অপরাধ। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে সত্য প্রমাণিত হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্য এক অভিযোগে জানা যায়, আব্দুল কুদ্দুস মিয়া নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কলেজ পরিচালনা পরিষদের কাছে তথ্য গোপন করে অত্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি ভাগিয়ে নেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ডিগ্রী ক্লাসে পাঠ্য বিষয় হিসাবে আছে এমন বিষয়ের শিক্ষক বয়ো জ্যেষ্ঠতা অনুপাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্য। আব্দুল কুদ্দুস মিয়া তথ্য গোপন করে আইসিটি শিক্ষক হয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি দখল করে নেন। এমতাবস্থায় এক বছর পার হয়ে গেলও নিয়ম লংঘন করে অবৈধভাবে কলেজের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোপনে কলেজের বিভিন্ন প্রোগ্রামের অজুহাত দিয়ে এলাকার কলেজ হিতৈষীদের কাছ থেকে ডোনেশনের নামে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে নয় ছয় হিসেব দিয়ে বাকি টাকা তার হিসেবেই রাখছেন। কলেজের হিসাব নিকাশ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কারো মতামত কিংবা পরামর্শের তাওয়াক্কা করেন না।তার যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন। ফলে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন হতে চলছে।নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর আব্দুল হাই সিকদার জানান, অভিযোগ আমাদের কাছে পাঠান।তদন্ত করে এ ধরনের নিয়ম বহির্ভূত বিষয় পাওয়া গেলে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অত্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক কর্মচারীদের নানা অভিযোগের কম নয়। কলেজের শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, আব্দুল কুদ্দুস মিয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর কলেজ শিক্ষকদের প্রতি নানা ধরনের অসাধাচরণ করে যাচ্ছেন। তার যাই ইচ্ছা তাই করছেন। এতে শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধ পন্থায় নিয়োগ প্রাপ্ত এ অধ্যক্ষের তুঘলকি আচরণে কলেজে শিক্ষার পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং এলাকায় নীতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে জানা যায়। যার কারনে কলেজে নতুন করে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও উপস্থিতি কমে গেছে। অন্য এক অভিযোগে জানা যায়, অত্র কলেজে যোগদানের সময় আব্দুল কুদ্দুস মিয়া আইসিটির যে সনদ প্রদান করেছেন তাতেও গরমিল রয়েছে। বিধি মোতাবেক তদন্ত করলে অবশ্যই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।










