
বিশেষ সংবাদদাতা,সেবককন্ঠ
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের নীরবতায় উচ্ছেদ নোটিশ উপেক্ষা।দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলদারের কবলে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের নার্সারি ও গুদাম । বর্তমানে প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারণে প্রতি মাসে মসজিদ হারাচ্ছে ৩(তিন) লাখ টাকা রাজস্ব। জায়গাটি আদৌ দখলমুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়।জানা গেছে,বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কৃষক লীগ নেতা ভাড়া ছাড়াই দখলে নেন চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের ৩৮ হাজার বর্গফুট জায়গা। সেখানে নার্সারিও গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী এক ব্যক্তি মসজিদের সিঁডির নিচে ৩০৩৪ বর্গফুটের গুদাম দখলে নিয়েছেন। এতে নার্সারি ও গুদামের ভাড়া মিলিয়ে প্রতি মাসে মসজিদ কর্তৃপক্ষের ৩ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেও উচ্ছেদে এখনো কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে জমিয়তের ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের বর্তমান পরিচালক ড.সৈয়দ শাহ ইমরান কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান অবৈধ দখলদারের বিষয়ে আমরা অবগত আছি, এ বিষয়ে মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা মহোদয় ও কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র কে অবহিত করা হয়েছে। এই বিষয়টা তাদের নজরে আছে। আশা করি যথাযথ সময়ে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০১৮ সাল থেকে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের মালিকানার ৩৮ হাজার বর্গফুটের জায়গা দখল করে ‘আরণ্যক’ নামে একটি নার্সারি গড়ে তুলেছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাঙ্গুনিয়ার সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। এরপর থেকে ভাড়া দেন না এই নেতা। পরিশোধ করেননি ভাড়া বাবদ বকেয়া প্রায় ১৫ লাখ টাকা। উল্টো সেই জায়গা রঞ্জন দাস নামক আরেকজনের কাছে ভাড়া দেওয়া হলেও মসজিদের ফান্ডে কোনো টাকা জমা হয় না। বর্তমান এতে প্রতি মাসে মসজিদের গচ্চা যাচ্ছে ২ লাখ টাকা।জানা যায়, রঞ্জন দাস প্রতিমাসে ৪০(চল্লিশ) হাজার টাকা করে শফিকুল ইসলামকে ভাড়া দিত। গোপন একটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শফিকুল ইসলাম পলাতক থাকায় তার পক্ষ হয়ে ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের এলডি কাম টাইপিস্ট কর্মচারী মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামে এক ব্যক্তি।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে শফিকুল ইসলাম যেমন ভাড়াই দিচ্ছেন তেমনি এ নার্সারিতে রঞ্জন দাস যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। উক্ত নার্সারিতে তার বিরুদ্ধে উচ্চ দামে চারা গাছ বিক্রি, নকল সার,বীজের অবৈধ ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শফিকুর রহমানের সাথে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোন চক্তি নেই। অতীতেও কোন চুক্তি ছিল না। এই জায়গা মাহাবুবুর রহমান নামক এক ব্যক্তির নিকট মসজিদ কমপ্লেক্সর ভাড়ায় চুক্তি ছিল। বিগত ৩০-১০-২০১৮ তারিখে উক্ত ব্যক্তির নামে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীতে তিনি তার নার্সারি পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নন বলে জানান।তারই মধ্যে শফিকুর রহমান নার্সারিটা দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে তিনি ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর গা ঢাকা দিয়ে আছে বলে জানা যায়। এদিকে মসজিদের এ জায়গা দখলমুক্ত ও ইজারার টাকা আদায় করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর দুই দফা চিঠি দেয়। ২০২৩ সালের প্রথম দিনও উচ্ছেদ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু রাঙ্গুনিয়ার সাবেক এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের প্রত্যক্ষ চাপে কৃষক লীগ নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। বরং ২০২২ সালে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের টেলিফোনে স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের তৎকালীন পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ারকে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও একই অবস্থায় রয়েছে জায়গাটি। এ অবস্থায় জায়গাটি আদৌ দখলমুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ধর্ম উপদেষ্টাকে ফোন করা হলে মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান স্যার তো এখন অফিসে নেই। তবে এই বিষয়টা ধর্ম উপদেষ্টা মহোদয় কে অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা করা হবে। এদিকে সংশ্লিষ্ট মহল অতি শীঘ্রই অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদের জোর দাবিও জানিয়েছেন। অন্যদিকে মসজিদের পূর্বপাশে ৩০৩৪ বর্গফুট জায়গা গুদাম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিমাসে ২১ হাজার টাকায় ভাড়া নেন মাহবুব মহিউদ্দিন নামের একজন। তিনি আবার সেই জায়গা ভাড়া দেন বিএনপির ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী খোরশেদুর রহমানকে। সেই থেকে গুদামটি খোরশেদুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।জানা যায়, খোরশেদুর রহমান বর্তমানে গুদামটির অর্ধেকাংশে ” মিলটন ডেকোরেশন”কে প্রতি মাসে৭০ হাজার টাকায় ভাড়ায় লাগিয়েছে এবং বাকি অংশে ব্যবসার অফিস করে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।বর্তমানে গুদামটি বর্তমান বাজারে ১ লাখ টাকা ভাড়া হলেও ৩৫ হাজার টাকা নিজ উদ্যোগে মসজিদ কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে জমা দিচ্ছেন খোরশেদ। যদিও তাঁর সঙ্গে মসজিদ কর্তৃপক্ষের কোনো চুক্তি নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ৪(চার) বছর আগেই অর্থাৎ ১০-১২-২০১৮ তারিখে জনৈক মাহবুব মহিউদ্দিনের সাথে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মসজিদ কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ গুদাম খালি করে দেওয়ার আদেশ জারি করা হলেও তিনি সে সময় থেকে গুদামখানি আর খালি করে দেন নি। এই সময় থেকে খোরশেদুর রহমান গুদাম টি অবৈধ দখলে থেকে নিজস্ব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, তিনি অবৈধ দখলে নেওয়া এগুদামে তার অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগসহ ৪/৫ এসি ব্যবহার করে আসছেন তার কোন বিদ্যুৎ বিল দেন না। এভাবে মসজিদ কর্তৃপক্ষের খাতায় প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল তুলে দিচ্ছেন। স্থানীয় মুসল্লি পরিষদ নামে কিছু ব্যক্তিবর্গ তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে জানান,খোরশেদ “শাহাদাতে কারবালা “নামে ধর্মীয় দোহাই দিয়ে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্সের এইসব সম্পদ অবৈধভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছে। অভিযোগে আরও জানা যায়, তাকে এসব কাছে সহযোগিতা করে যাচ্ছে উক্ত মসজিদের একজন খণ্ডকালীন পেশ ইমাম। এ খন্ডকালীন পেশ ইমামের বিরুদ্ধে মসজিদে বিবাহের আকদ-বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, খোরশেদুর রহমান বিগত সরকারের আমলে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব খাটাতো বর্তমানে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নাম দিয়ে প্রভাব কাটাচ্ছেন। মেয়র ও বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানা যায়, খোরশেদুর রহমান বিএনপি’র কোন পদধারী লোক নয়।










