
১)মাসিকে (পিরিয়ড) টক খেলে কী হয়?
অনেকেই মনে করেন মাসিকের সময় টক খেলে বেশি রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু টক খাবারের সাথে পিরিয়ডের রক্ত বেশি বা কম ক্ষরণের কোন সম্পর্ক নেই। সেজন্য যেকোন টক জাতীয় ফল বা খাবার অন্য সময়ের মত মাসিকের সময়ও খাওয়া যায় এতে বেশি রক্তক্ষরণ বা পেট ব্যথা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
তবে লবণ যুক্ত টক খাবার যেমন: আচার না খাওয়াই ভালো। কারণ বরই, তেতুল, জলপাই বা যে কোন টক ফলের আচারে প্রচুর পরিমাণে লবন দেয়া হয়। আর সেই লবণের কারণেই মাসিকের রক্তের প্রবাহ বাড়ে ও অনেক সময় পেট ব্যথা হতে পারে। এই লবণটাই মূলত ক্ষতির কারণ এবং এর কারণেই ব্লিডিং বাড়ে, টকের কারণে নয়। অতিরিক্ত লবণ দেয়া, প্রক্রিয়াজাত এবং বোতলজাত যে কোন খাবার পিরিয়ডের সময় ও যেকোন সময়ের জন্যই ক্ষতিকারক কারণ এতে থাকে উচ্চমাত্রার সোডিয়াম যা রক্তক্ষরণ বাড়ায়।
পিরিয়ডের সময় যে কোন টক ফল খাওয়া যায়, তবে অবশ্যই বাড়তি লবণ ছাড়া। এছাড়াও নোনতা বিস্কিট, লবণ দেয়া চিপস ও বাড়তি লবণ দেয়া যে কোন খাবারই এসময় এড়ানো ভালো।
২)যখন মাসিক হয়, তখন কী কী খাবার না খাওয়া উচিত?
একজন পুরুষ হিসেবে বিগত বছর দুই হলো মাসিক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওপেন আলোচনায় অংশগ্রহণ করছি। ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিচ্ছি। প্যাডম্যান সিনেমার উপর রিভিউ লিখেছি। আমি মনে করি এটা নিত্যান্তই নরমাল ব্যাপার, এ ব্যাপারে কথা বলা কোন অবস্থাতেই “ট্যবু” বিষয় হওয়া উচিত নয়।
স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই এ সময় যে কোন অবস্থায়ই কোন খাবারে নিষেধাজ্ঞা নেই। যদি না অন্যান্য ক্ষেত্রে ডাক্তার কর্তৃক নির্দিষ্ট কোন খাবার নিষিদ্ধ না থাকে। (যেমন কোলেস্টরেল এর জন্য রেডমিট)
তবে কিছু যায়গায় তথ্য পাওয়া যায় দুধ, চিজ বা দই, জাঙ্ক ফুড, লবণ, কোল্ড ড্রিঙ্ক, এগুলো না খাওয়ার। ( পিরিয়ডে যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না) সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য এগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনিতেই স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। অলাদা করে শুধু মাসিকের জন্য হিসাবে দেখার সুযোগ নাই।
তবে এসময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, বেশী পানি, সামুদ্রিক মাছ, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, সবুজ শাক-সবজি, ক্যালশিয়াম যুক্ত খাবার, কলা, প্রোটিন, বীজ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। (পিরিয়ডে যেসব খাবার খাবেন)
চলুন, যেকোনো কুসংস্কার হতে মুক্ত হই, নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক হই।
৩)মাসিক অবস্থায় হাতে মেহেদী লাগানো যায় কি?
সর্বাবস্থায় মেহেদি লাগানো যায় । মেহেদি লাগানোর জন্য কোন ” সময় ” বাধা নয় । প্রতিবন্ধকতা হল , মেহেদি লাগানোর উদ্দেশ্যে এটা হতে পারবেনা যে পর পুরুষের সামনে যাবে । এটা অবশ্যই হারাম।
আর তাছাড়া আর একটা কথা মনে রাখা দরকার যে মেহেদী ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই
মাসিকের ওষুধ কী কী?
বিশেষভাবে “মাসিকের ঔষধ” নামে পরিচিত কোন ঔষধ সম্পর্কে সচেতন নই। যাইহোক, এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যা সাধারণত মাসিকের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলি যেমন মাসিকের ক্র্যাম্প, ফোলাভাব এবং মেজাজ পরিবর্তনের উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে:
ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs): এই ওষুধগুলি, যেমন ibuprofen এবং naproxen, মাসিকের ক্র্যাম্পের সাথে যুক্ত ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হরমোনজনিত গর্ভনিরোধক: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, প্যাচ এবং ইনজেকশনগুলিতে হরমোন থাকে যা মাসিক চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে, ভারী রক্তপাত কমাতে এবং মাসিকের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য উপসর্গগুলিকে উপশম করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার (পিএমডিডি), প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোমের (পিএমএস) একটি গুরুতর রূপের লক্ষণগুলি উপশম করার জন্য নির্দিষ্ট ধরণের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টগুলি নির্ধারণ করা যেতে পারে।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে যেকোন ওষুধ একজন ডাক্তারের নির্দেশনায় নেওয়া উচিত, কারণ তারা একজন ব্যক্তির অনন্য প্রয়োজন এবং চিকিৎসা ইতিহাসের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারে।
মেয়েদের মাসিক কিভাবে বন্ধ হবে?
মানে প্রশ্নটার ঠিক মানে বুঝলাম না। আপনি কি জোর করে বন্ধ করে দিতে চান?
মাসিক তার প্রাকৃতিক নিয়মেই নির্দিষ্ট বয়সে বন্ধ হয়ে যায় এবং এই অবস্থাকে ‘মেনোপজ’ বলে। সাধারনত ৪৫ বছরের উর্দ্ধে এই অবস্থার সূচনা ঘটে। ওভারিতে ইস্ট্রোজেন আর প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরন হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।
এছাড়াও নির্দিষ্ট বয়সের আগে সার্জারি করেও বন্ধ করা যায়। তবে খুব দরকারি না হলে যেমন জরায়ুতে টিউমার বা ক্যান্সার এইসকল রোগ ধরা না পরলে সার্জারি না করাই ভালো। কারন এসব ক্ষেত্রে শারীরিক অবনতি ঘটে। মোটা হয়ে যাওয়া, কোমরে ব্যাথা, চোখের নীচে কালো দাগ পড়ে যাওয়া এসব লক্ষণ দেখা যায়।
মাসিকের ব্যথায় করণীয় কী?
এটির আসল উত্তর ছিল: মাসিকের ব্যাথায় করনিয়?
মাসিকের ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য অনেকে ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে এগুলি আদতে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই এই সমস্যার সমাধানের জন্য ঘরোয়া উপায়ের ওপর জোর দেওয়াই শ্রেয়।
ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডস চলাকালীন নানান সমস্যার সম্মুখীন হন মহিলারা। এ সময় খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা, তলপেট, শরীরে ব্যথা তো দেখা দেয়ই। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে পেট ব্যথা সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যায়। এই ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য অনেকে ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে এগুলি আদতে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই এই সমস্যার সমাধানের জন্য ঘরোয়া উপায়ের ওপর জোর দেওয়াই শ্রেয়।
হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন- পিরিয়ডসের সময় হিটিং প্যাড বা হট ব্যাগ গর্ভাশয়ের মাংসপেশীর মোচড় থেকে স্বস্তি দেয়। পিরিয়ডসের সময় পিঠ ব্যথা কম করার জন্য পিঠের নীচের অংশে হিটিং প্যাড রাখা যেতে পারে। আবার এ সময় গরম জলে স্নান করলে এবং গরম তরল পদার্থ পান করলেও স্বস্তি পাওয়া যায়।
হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন- পিরিয়ডসের সময় হিটিং প্যাড বা হট ব্যাগ গর্ভাশয়ের মাংসপেশীর মোচড় থেকে স্বস্তি দেয়। পিরিয়ডসের সময় পিঠ ব্যথা কম করার জন্য পিঠের নীচের অংশে হিটিং প্যাড রাখা যেতে পারে। আবার এ সময় গরম জলে স্নান করলে এবং গরম তরল পদার্থ পান করলেও স্বস্তি পাওয়া যায়।
নারকেল বা তিলের তেলের মালিশ- আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, নারকেল বা তিলের তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ ও লিনোলিক অ্যাসিড থাকে। পিরিয়ডের সময় তলপেটে নারকেল বা তিলের তেলে ম্যাসাজ করলে মাংসপেশীর মোচড় কমানো যায়। এর ফলে ব্যথা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
হার্বাল টি- পিরিয়ডের সময় হার্বাল চা পান করলে সুফল পেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিরিয়ডের ব্যথা কম করার জন্য দুধ ছাড়া আদা, গোলমরিচ দেওয়া চা পান করতে পারেন। পিরিয়ডসের ব্যথাই নয়, বরং অনিয়মিত ঋতুস্রাব, প্রি-মেন্সট্রুয়ল সিন্ড্রোমের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে এই চা। এ ছাড়াও ক্যামোমাইল চা-ও এ সময় পান করা যেতে পারে। এই চা প্রোস্টাগ্ল্যাংডিনের উৎপাদন কম করে।
ফ্যাট জাতীয় খাবার, অ্যালকোহল, ক্যাফিন থেকে দূরে থাকুন- ঋতুস্রাবের সময় অধিক তেল ও মশলাযুক্ত খাবার, মদ, ক্যাফিন যুক্ত পানীয় গ্রহণ করা উচিত নয়। এর ফলে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয় এবং পেট ফুলে যেতে পারে। পিরিয়ডসের সময় নোনতা, মদ, ক্যাফিন, কার্বোনেটেড ড্রিঙ্ক এড়িয়ে চললে ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে পারেন।
সামান্য ব্যায়াম করুন- ব্যথার কারণে পিরিয়ডসের সময় ব্যায়াম করতে পারেন না অনেকে। কিন্তু একটি সমীক্ষা অনুযায়ী সহজ-সরল যোগব্যায়াম, হাঁটাচলা করলে ব্যথা কমতে পারে। তবে এ সময় ভারী কোনও কাজ করা উচিত নয়। ব্যায়াম করার ফলে এন্ডোর্ফিন নিষ্কৃত হয়। যা পেশীর মোচড় কম করার জন্য প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে।
মেয়েদের সময় মতো মাসিক না হওয়ার কারণ কী?
জ্বর,সর্দি কাশি হলে আপনি বাইরে থেকে বুঝতে পারবেন কিন্তু মাসিকজনিত রোগভোগের বিস্তার অনেকদূর যা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়।
অনিয়মিত মাসিকের প্রধান ও একমাত্র কারন হল অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন। খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমান খুব গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে মেয়েদের মাসিক নিয়মিত রাখার ক্ষেত্রে। দরকার বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা জিনিস খাদ্যতালিকা থেকে অবশ্য ই বাদ দিতে হবে।
আমাদের মোটামুটি ২৮-৩২ দিনের সাইকেল থাকে। কারোর কারোর ৪০ দিনের ও হয়। শরীরচর্চা একটা খুব গুরুত্বপূর্ন জিনিস। প্রাথমিকভাবে যারা ওবেসিটি অর্থাৎ শরীর স্থূল তারা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগলেও যারা রোগা তারাও কিন্তু অনেকক্ষেত্রে এই সমস্যায় ভুগে থাকে।অর্থাৎ রোগা হোক বা মোটা আপনাকে সঠিক শরীরচর্চা আর ডায়েটের মাধ্যমে ইস্ট্রোজেন,প্রোজেস্টেরন আর টেস্টোস্টেরন হরমোন সঠিক ব্যালেন্স বজায় রাখতে হবে।
● ডায়েট চার্টে প্রোটিন বেশি রাখতে হবে, কার্বোহাইড্রেট কম।
● সঠিক ওজন অর্থাৎ না মোটা না রোগা এমন ওজন মেইনটেন করতে হবে।
● ব্যায়াম বা যোগা যাই করেন না কেন দিনে শুধু একবার আধঘন্টা যথেষ্ট। মাথায় রাখবেন অতিরিক্ত শরীরচর্চা মাসিক অনিয়মিত করতে পারে।