ডেইরি, পোল্ট্রি,মৎস্য ও কৃষিবিষয়ক অনলাইন নিউজ ও ভিডিও পোর্টাল

সর্বশেষ :

    ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া যাবে?

    ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত একটি গরু। এ রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে প্রথমে বসন্তের মতো গুটি দেখা যায়। উপজেলার কালিগ্রাম এলাকায়। ছবি: সংগৃহীতনাম ল্যাম্পি স্কিন। গবাদিপশু, বিশেষ করে গরুর নতুন একটি রোগ এটি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নওগাঁ ও ঝিনাইদহে প্রাদুর্ভাব বেশি। ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত হলে অনেকেই পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন। এই মাংস খাওয়া যাবে কি না, এ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
    এ অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গবেষক বলছেন, ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত এ রোগের জীবাণু মানবদেহে কোনো ক্ষতি করে না। আর সঠিক তাপমাত্রায় মাংস সেদ্ধ হলে জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে যেকোনো রোগে আক্রান্ত পশুর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই গবেষকেরা।
    বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম বলেন, ল্যাম্পি স্কিন নতুন একটি রোগ, যা আগে বাংলাদেশে ছিল না। দু-এক বছর ধরে অন্য দেশ থেকে আসা গরুর মাধ্যমে এই জীবাণু দেশে প্রবেশ করেছে। তা ছাড়া সংকর জাতের গরুতে এর প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেশি। আক্রান্ত পশুর গায়ে গুটি দেখা যায়। তবে এটি ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় পশুর মাংস সেদ্ধ করার সময় জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, ব্যাকটেরিয়া উচ্চ তাপে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) সৃষ্টি করলেও ভাইরাস তা করে না। তাই আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই। তবে না খাওয়াই ভালো।’
    গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে প্রথমে বসন্তের মতো গুটি দেখা যায়। দু-এক দিনের মধ্যেই গরুর পুরো শরীরে থাকা গুটিগুলো ঘায়ে পরিণত হয়। এ সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয়। আক্রান্ত গরু খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান পচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে পড়তে পারে।
    বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ল্যাম্পি স্কিন ব্যাকটেরিয়াজনিত অ্যানথ্রাক্স রোগের মতো ছোঁয়াচে জুনোটিক রোগ নয়। জীবাণু পশু থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে পশুতে ছড়ালে তাকে জুনোটিক রোগ বলা হয়। তাই ল্যাম্পি স্কিন রোগে মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাইরাসজনিত হওয়ায় এর তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে বাজারে পাওয়া যায়, এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন (সংক্রমণ) থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
    মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ মো. বাহানুর রহমান বলেন, ‘ভাইরাসজনিত রোগের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে ভ্যাকসিন (টিকা) প্রদান। ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটির প্রকোপ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তেমন কিছু করার থাকে না। যেহেতু এটি নতুন রোগ, এর ভ্যাকসিন আমাদের কাছে নেই। যে প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে, তাতে এ রোগ নিয়ে গবেষণা করার সময় এসে গেছে।’
    ল্যাম্পি স্কিন নিয়ে এই গবেষকদের সারকথা হচ্ছে, এই রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই। আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া অনেকটা রুচির ব্যাপার। রোগাক্রান্ত কোনো পশুর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ সব সময়ই দিয়ে থাকেন তাঁরা। ল্যাম্পি স্কিন রোগের ক্ষেত্রেও তাঁদের একই পরামর্শ। কারণ, রোগাক্রান্ত পশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ল্যাম্পি স্কিনে আক্রান্ত গরু অন্য কোনো জীবাণু দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। তাই যেকোনো রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস বা দুধ না খাওয়াই ভালো।

    Share on facebook
    Facebook
    Share on twitter
    Twitter
    Share on linkedin
    LinkedIn
    Share on whatsapp
    WhatsApp
    Share on email
    Email