ডেইরি, পোল্ট্রি,মৎস্য ও কৃষিবিষয়ক অনলাইন নিউজ ও ভিডিও পোর্টাল

সর্বশেষ :

    কিভাবে ভাল উৎপাদন বাড়াবেন দেশি কৈ মাছ চাষ

    সেবককণ্ঠ রিপোর্ট

    তৎকালিন সময়ে আমাদের গ্রামে গঞ্জে কৈ মাছের প্রচু ফলন ও চাহিদা ছিল কিন্তু তা এখন ‍বিলুপ্তির পথে।

    কৈ মাছ আমাদের দেশের মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি মাছ হিসাবে পরিচিত। কৈ মাছ কম চর্বিযুক্ত, পুষ্টিকর এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এই মাছটি জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায় ফলে এ মাছের বাজার মূল্য তুলনামুলকভাবে বেশি হয়। অতীতে মাছটি ডোবা-পুকুর, হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিল, এবং প্লাবনভুমিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যেত।

    বর্তমানে দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচের জন্য বাঁধ নির্মান, শিল্পকারখানার বর্জ্য, পানি দূষণ, নির্বিচারে মাছ আহরণ, প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাষক ব্যাবহারের ফলে মাছের রোগবালাই বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে কৈ মাছের প্রচুর্যতা কমে যাচ্ছে।

    পাশাপাশি খাল-বিল, নদী-নালা, প্লাবনভুমি ও মোহনায় প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মাছটি ইতিমধ্যে বিপন্ন প্রজাতির মাছ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অত্যন্ত মুল্যবান দেশীয় প্রজাতির এই মাছটির বিলুপ্তির হাতথেকে রক্ষা করার জন্য, বাংলাদেশ মৎস গবেষনা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে, কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা সফলভাবে উদ্ভাবন করেছে। এর ফলে কৈ মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা যেমন সহজ হয়েছে তেমনিভাবে মাছটি বিলুপ্তির হাতথেকে রক্ষা পেয়েছে।

    কৈ মাছের বৈশিষ্ট্য
    কৈ মাছ সাধারণত কচুরিপানা, আগাছা ও ডালপালা অধ্যুষিত জলাশয়ে বসবাস করে।
    কম গভীরতাসম্পন্ন পুকুরে সহজে চাষ করা যায়।
    কৈ মাছের অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেচে থাকতে পারে, আর এ জন্য জীবিত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়।
    কৈ মাছের রোগবালাই কম হয় ও বিরূপ আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

    পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
    কৈ মাছের পুকুর অবশ্যই রোদযুক্ত স্থানে হতে হবে।
    কৈ মাছ চাষের জন্য এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে যে পুকুর কম কাদাযুক্ত হয়।
    পুকুরে ৪-৫ মাস পানি থাকে।
    ১৫-১০০ শতাংশ আয়তনের পুকুর নির্বাচন করা ভালো। তবে এর চেয়ে বড় বা ছোট হলে মাছ চাষ করা যাবে।
    পুকুরের পূর্ব ও দক্ষিন পাশে কোন গাছপালা যেন না থাকে। উত্তরের ও পশ্চিমের গাছপালা বেশি একটা ক্ষতি করে না । যদি থাকে পাত যাতে পানিতে না পড়ে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
    পুকুরে পানি দেওয়ার সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে।
    পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
    পুকুরের চারপাশ নেট দিয়ে বেড়া তৈরি করতে হবে।
    পুকুরে পানি সেচ দেওয়া
    পুকুর শুকিয়ে চুন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর নিরাপদ উৎস থেকে ২-২.৫ ফুট পরিমান পানি দিতে হবে। পুকুরে গভীর নলকুপের পানি দিতে হবে। পুকুর বা ডোবা থেকে পানি দেওয়া হয় তাহলে পাইপের মুখে ফিল্টার নেট বা নালায় জাল দিয়ে পানি ছেঁকে দিতে হবে। যাতে করে পানির সাথে অন্য কোন জলজ প্রাণী, কীটপতঙ্গ, রাক্ষুসে ও অচাষকৃত মাছ প্রবেশ করতে না পারে।

    পোনা মজুদ ও ব্যাবস্থাপনা
    প্রস্তুতকৃত পুকুরে প্রতি শতাংশে ২০০০-৫০০০ পিছ পর্যন্ত পোনা দেওয়া যাবে।
    মাছ পুকুরে ছাড়ার ৯০-১২০ দিনের মধেই বাজার জাত করা যাবে।
    পোনা মজুদের দিন থেকে ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পুরক পিলেট খাদ্য দিতে হবে।
    মাছের দেহের ওজনের ১৫% হারে সকাল ও বিকালে ছিটিয়ে দিতে হবে।
    মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষন করার জন্য প্রতি ১৫ দিন পরপর জাল টেনে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
    কৈ মাছের পুকুরে প্রচুর প্লাংটন দেখা যায়। এই প্লাংটন নিংন্ত্রনের জন্য প্রতি শতকে ২-৩ টি সিলভার কার্পের পোনা ও ৮-১০ টি মনোসেক্স তেলাপিয়া মজুদ করা যেতে পারে।
    কৈ মাছ ৪-৫ মাসে ৬০-৭০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে।
    প্রতি ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে ১কেজি ৪০০ খাদ্য খেয়ে ১ কেজি কৈ মাছ উৎপাদন হবে।
    কৈ মাছ চাষে ভাল উৎপাদন কি ভাবে পাওয়া যায়
    ভাল উৎপাদন পাওয়ার জন্য নিন্মবর্নিত বিষয় সমুহের প্রতি খেয়ার রাখতে হবে।

    পানির গুনাগুন ঠিক রেখে মাছ চাষ করতে হবে
    পানির মান হবে পিএইট ৭.৫-৮.৫ ও অ্যোমোনিয়া ০-০.০২মিলি/লি. মাত্রায় রাখতে হবে।
    প্রতি মাসে একবার হলেও ২০-৩০% বিশুদ্ধ পানি পুকুরে দিতে হবে।
    প্রতি ১৫ দিন পরপর প্রতি শতাংশে চুন ২০০ গ্রাম ও লবন ৪০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
    চন ও লবন ২ ঘন্টা ব্যবধানে দিতে হয়।
    পানির গভীরতা ১ মিটার হবে।
    ভাল মানের পোনা দিতে হবে কোন ভাবেই ক্রস ব্রেড পোনা দেওয়া যাবেনা।
    আগাম উৎপাদিত কৈ মাছের পোনা ব্যবহার করা যাবেনা মানে ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদিত পোনা।
    মাছের সঠিক গড় ওজন নির্ধারণ করে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে ও সপ্তাহে একদিন খাদ্র প্রয়েগ বন্ধ রাখতে হবে।
    সর্বোপরি নিজেকে একজন পরিশ্রমি এবং উদ্যামি হতে হবে। দেশি কৈ মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা মেনে চাষ করলে সফলতা আসবেই। মনে রাখতে হবে নিজের সঠিক পরিচালনাই পারে সফলতার দিকে ধাবিত করতে।

    Share on facebook
    Facebook
    Share on twitter
    Twitter
    Share on linkedin
    LinkedIn
    Share on whatsapp
    WhatsApp
    Share on email
    Email