ডেইরি, পোল্ট্রি,মৎস্য ও কৃষিবিষয়ক অনলাইন নিউজ ও ভিডিও পোর্টাল

সর্বশেষ :

    সৈকতের অগ্রবর্তী অংশে কতটুকু উপযুক্ত ঝাউ?

    আহমদ ‍গিয়াস,কক্সবাজার
    কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে চার স্তরের বায়োশিল্ডে সমৃদ্ধ হবে জীববৈচিত্র্য ও ব্লু- ইকনোমি!
    What is the sustainable Bio-Shield of Cox’s Bazar sea coast?
    ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-সাইক্লোনসহ সামুদ্রিক দূর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের আদর্শ বায়োশিল্ড বা জৈব প্রতিরোধ ব্যবস্থা কি হতে পারে- তা নিয়ে দেশের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি বা তা নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। তাই আমাদের সমুদ্র উপকূলে ঝাউগাছের বনায়নের মাধ্যমে মাত্র এক স্তরের বায়োশিল্ড তৈরি করা হয়েছে। তবে এই একটি স্তরের এবং ঝাউগাছের বায়োশিল্ড কতটুকু উপযুক্ত তা নিয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মধ্যেও বিতর্ক রয়েছে।
    প্রশ্ন ওঠেছে, ঝাউগাছের বায়োশিল্ড কতটুকু ঠেকাতে পেরেছে ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়? আর কতটুকুই বা ঠেকাতে পারছে সমুদ্র তীরের ভাঙন?
    আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার সৈকতের পরাজিত ঝাউগাছগুলো পরবর্তীতে মহামারীতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। পরে ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে ন্যাড়া সৈকতে ফের ঝাউগাছ লাগানো হয়। এরপর সৈকতে ভাঙন আরো তীব্র হয়। আর এ দোষ গিয়ে পড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জের উপর। ফলে সৈকতে ঝাউগাছ লাগানোর হার আরো বাড়ানো হয়। শুধু তাই নয়, এবছরও সৈকতের আরো শত একর জমিতে ঝাউগাছের চারা লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। অথচ এ জমিগুলোতে একসময় ঝাউবাগান ছিল এবং পরে সামুদ্রিক ভাঙনের ফলে ধীরে ধীরে সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। আসলে ঝাউসহ অন্যান্য দীর্ঘ উচ্চতাসম্পন্ন বৃক্ষগুলো সমুদ্র তীরের বায়োশিল্ডের তৃতীয় স্তরের উদ্ভিদ এবং চতুর্থ স্তরের অংশ। কিন্তু সৈকতের অগ্রবর্তী অংশে (বায়োশিল্ডের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরে) এই ধরনের দীর্ঘ উচ্চতা সম্পন্ন বৃক্ষের ঢাল সৃষ্টির কারণে বালিয়াড়িগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে এবং সাগর তীরে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। কারণ সমুদ্র থেকে শত শত মাইল পেরিয়ে বিনাবাধায় ধেয়ে আসা বাতাসগুলো সৈকতে এসে ঝাউগাছের মত দীর্ঘ উচ্চতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নীচের দিকে চাপ তৈরি করছে এবং এতে বালিয়াড়ির মাটি সরে যাচ্ছে। বিষয়টি আপনারা যেকোন ঝড় পরবর্তী একটি বড় ধানক্ষেতের দিকে খেয়াল করলে স্পষ্ঠ বুঝতে পারবেন, যে ধানক্ষেত একটি রাস্তার পাশে অবস্থিত এবং সেই রাস্তায় কয়েকটি বড় গাছও রয়েছে। দেখবেন, ঝড়ে বা বাতাসের তোড়ে ধানক্ষেত কোথাও নেতিয়ে পড়েনি; কেবল রাস্তার পাশের গাছের আগের অংশটি ছাড়া। অর্থাৎ প্রাকৃতিক বায়োশিল্ড না মেনে গাছ রোপনের কারণে এমন পরিণতি দেখা দিচ্ছে। একই ঘটনা ঘটছে কক্সবাজার সৈকতে। অথচ কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে একটি আদর্শ বায়োশিল্ড তৈরি করে দেশের ব্লু-ইকনোমিও জোরদার করা যায়।
    সাধারণত: সমুদ্র সৈকতের আবহাওয়াকে স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সমুদ্র থেকে আসা বায়ু সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। অনেক সময় সমুদ্র থেকে মারাত্মক দূর্গন্ধযুক্ত ক্ষতিকর বায়ু আসে। এতে মানুষ অসুস্থ হয়। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও উপকূলীয় এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাড়িঘর ও গাছপালা উপড়ে পড়ে অনেক মানুষ হতাহত হয়। আর সমুদ্র থেকে আসা এ ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলে প্রাকৃতিকভাবে যে জৈব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তা-ই ন্যাচারেল বায়োশিল্ড। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রায় সাড়ে চারশত সংজ্ঞা থাকায় একটি আদর্শ বায়োশিল্ড নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তবে আমি প্রাকৃতিক নির্বাচনের সূত্র ধরে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের জন্য একটি আদর্শ বায়োশিল্ড এর মডেল উপস্থাপন করছি; সুধীজনের চিন্তার উদ্রেক করার জন্য।
    ১. সমুদ্র সৈকতের জোয়ারভাটা অঞ্চলের নিম্নস্তর: Sea-shells বা সামুদ্রিক শামুক ঝিনুকের প্রজনন নির্বিঘ্নকরণ:
    ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার্স বা বাস্তুসংস্থান প্রকৌশলী নামে পরিচিত শামুক-ঝিনুক সমুদ্রের তীর গঠনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সৈকতের জোয়ারভাটা অঞ্চলের নিম্নস্তরে অবস্থানকারী এই শামুক-ঝিনুককে সৈকতের বায়োশিল্ডের প্রথম অংশ বলা যায়। সমুদ্রের ‘পানি পরিস্কারক’, ‘সৈকতের পাহারাদার’সহ আরো নানা নামে পরিচিত একটি ঝিনুক প্রতিদিন গড়ে ২৪-৯৫ গ্যালনের উপরে পানি পরিশুদ্ধ করে। পানির নাইট্রেটস ও অ্যামোনিয়া শোষন করে পানিকে বিভিন্ন প্রাণির বসবাসের উপযোগী রাখে। ঝিনুক তাদের অভ্যাসগত কার্যক্রমের মাধ্যমে এমনভাবে কাঠামো তৈরি করে যাতে সমুদ্র উপকূলে জোয়ার প্রবাহ, তরঙ্গ ক্রিয়া এবং পলল গতিবেগ প্রভাবিত হয়। সামুদ্রিক প্রবাহ থেকে মাটির ক্ষয় রোধ করে সমুদ্রের তীর গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে ঝিনুক। এ কারণে উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের জন্য ঝিনুকের ভূমিকা অপরিহার্য । ঝিনুক না থাকলে সমুদ্রের অনেক প্রাণি টিকে থাকতে পারত না।
    কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক উপকুলে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ঝিনুকের আবাসস্থল রয়েছে। এসব অঞ্চলের ঝিনুকে মুক্তাও পাওয়া যায়। প্রায় এক যুগ আগের এক জরীপে দেশে ১৪২ প্রজাতির সামুদ্রিক ঝিনুক ও ১৫৯ প্রজাতির শামুক শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক ঝিনুক থেকে মুক্তা পাওয়া যায়। আর এরমধ্যে ৩টি সামুদ্রিক প্রজাতির ঝিনুক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদনও করা সম্ভব। বসন্তের শেষে ঝিনুকের ডিম পরিপক্কতা পায় এবং জুন আগস্টে এরা পানিতে প্রজনন করে থাকে। প্রতিটি স্ত্রী ঝিনুক ৭৫ লাখ থেকে ২০ কোটি পর্যন্ত ডিম ছাড়ে, যারমধ্যে বেঁচে থাকে মাত্র ১০০০টি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে নির্বিচারে ঝিনুক আহরণ, পরিবেশ দুষণ ও আবাসস্থলের পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশ থেকে ঝিনুকের আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে।
    বিশ্বের প্রায় স্বল্প উষ্ণপ্রধান ও উষ্ণপ্রধান সামুদ্রিক জলাশয় ঝিনুকের আবাসস্থল। এরা সমুদ্রের স্বল্প গভীর হতে ৮০ মিটার গভীর এলাকায় বিচরণ করে। মানুষ ও জলজ পরিবেশ উভয়ের জন্যই ঝিনুক খুবই গুরুত্বপুর্ণ। জলাশয় থেকে শৈবাল, জৈব পদার্থ এবং দ্রবীভুত ক্ষতিকারক উপাদান যেমন: ভারী ধাতু দুরীকরণে ঝিনুকের ভুমিকা রয়েছে। তাই ঝিনুক প্রাকৃতিক পানি পরিস্কারক হিসেবে কাজ করে। জলজ খাদ্য শৃঙ্খলের ক্ষেত্রেও ঝিনুক একটি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান এবং এরা জলজ খাদ্য শিকলের বিভিন্ন স্তরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করলে পরিবেশের ক্ষতি হয়। এ কারণে সৈকতের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে শামুক-ঝিনুক তোলা পুরোপুরি বন্ধ করে বায়োশিল্ডের প্রথম অংশ প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। যাতে সৈকতের পরবর্তী বায়োশিল্ডগুলোর ভিত্তি মজবুত হতে পারে।
    ২. দ্বিতীয় স্তরের বায়োশিল্ড: সৈকতের সর্বোচ্চ জোয়ারভাটা অঞ্চলের উপরের অংশে দ্রাক্ষালতার (Ipomoea pes caprae, সাগরলতা বা Railroad vine or the morning glory) বনায়ন ও বালিয়াড়ি সংরক্ষণ
    সমুদ্র সৈকতে মাটির ক্ষয়রোধ এবং শুকনো উড়ন্ত বালুরাশিকে আটকে বড় বড় বালির পাহাড় বা বালিয়াড়ি তৈরির মূল কারিগর হিসাবে পরিচিত সাগরলতা। আর সাগরে ঝড়-তুফান বা ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস উপকূলে ঠেকিয়ে রাখে বলে বালিয়াড়িকে সৈকতের রক্ষাকবচ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মানবিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এরফলে গত ৩ দশকে ভাঙনের শিকার হয়ে সাগরতীরবর্তী গড়ে ৫শ মিটার ভূমি সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষয়প্রাপ্ত সৈকতের সর্বোচ্চ জোয়ারভাটা অঞ্চলের উপরের অংশে সাগরলতার বনায়ন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে বালিয়াড়ি তৈরির বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অষ্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরে সীমিত পরিসরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এর প্রমাণ পেয়েছি।
    সাগরলতার রস থেকে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় স্টিং রোগের প্রতিষেধক তৈরি হয়। আর সাগরলতার ওষুধী ব্যবহার সম্পর্কে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা ও জেলে সমাজে দেশীয় ঐতিহ্যগত জ্ঞানও (ইন্ডিজেনাস নলেজ) রয়েছে। সমুদ্রে জেলিফিশের আক্রমণে কোন জেলে বিষক্রিয়ার শিকার হলে ক্ষতস্থানে সৈকতের সাগরলতার রস ব্যবহার করেন, তাতে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়। ওষুধ না দিলে ক্ষতস্থানে পঁচন ধরে।
    ৩. তৃতীয় স্তরের বায়োশিল্ড: নিশিন্দা-কেয়া-রায়মুনিয়াসহ মাঝারী উচ্চতার ঝোঁপ জাতীয় ওষুধী উদ্ভিদ (স্থানীয় যে যে প্রজাতি উপযুক্ত)
    কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বায়োশিল্ডের তৃতীয় স্তরে আমি নিশিন্দা (Vitex Negundo), কেয়া (Screw pine ), রায়মুনিয়া (Lantana Camara) সহ স্থানীয় জাতের মাঝারী উচ্চতার ( সর্বোচ্চ ১৩ ফুট উচ্চতাসস্পন্ন) ওষুধী ও ফলজ বৃক্ষের (যেমন বরই) প্রাকৃতিন বেষ্টনী তৈরির প্রস্তাব করছি।
    কেয়া থেকে দুরারোগ্য মৃগীরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ অন্তত ১৬টি রোগের প্রতিষেধক তৈরি হয়। নিশিন্দাও একটি মহা ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। দেশের যে ৯০ প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ থেকে ১১৯ প্রকারের ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে গুরুত্বের দিক দিয়ে নিশিন্দার অবস্থান প্রথম সারিতে। নিশিন্দা (ভাইটেক্স নেগুন্ডো) ডায়াবেটিস, স্মৃতি বিভ্রম, জ্বরসহ বহু রোগের মহৌষধ। এটি নন স্ট্রেয়ডাল এন্টি ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (এসএসএআইডি) হিসাবেও ভাল কাজ করে। ফোলা ব্যথায় নিশিন্দা পাতা গরম করে ব্যথাস্থানে লাগালে অথবা গরম পানিতে নিশিন্দা পাতা সিদ্ধ করে সেই রস দিয়ে গোসল করলে ব্যথা সেরে যায়। যক্ষা ও ক্যান্সারবিরোধী গুণও রয়েছে নিশিন্দায়।
    নিশিন্দার পাশপাশি একই বায়োশিল্ডে থাকতে পারে রায়মুনিয়া (লনটানা কামারা)। স্থানীয়ভাবে মগকেড়া ও মগগুলা নামে পরিচিত রায়মুনিয়ায় এক সঙ্গে তিন রঙের এবং প্রায় ১২ মাসই ফুল ফোটে। ফলে রায়মুনিয়ায় প্রজাপতি বেশি আসে। এই গাছের পাতার রস বাহ্যিকভাবে কুষ্ঠরোগ, ত্বকে চুলকানী, খসপাঁচড়াসহ জখমজনিত ক্ষতে এন্টিসেপ্টিক হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এর শেকড় ও কান্ড ক্রমাগত অতিজ্বর, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী, ম্যালেরিয়া, জরায়ুুর লিম্ফ নোড, যক্ষা, দাঁতে ব্যথা, মাথা ব্যাথা, প্রদাহ, গনোরিয়া এবং লিউকোরিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর পাতা থেকে চা-ও হয়। রয়েছে আরো বহু অর্থনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশগত গুণ।
    সৈকতের অগ্রগতি উদ্ভিদ সাগরলতার ৭০ থেকে ১শ ফুট বনের পরে কয়েকস্তরে নিশিন্দা, কেয়া ও রায়মুনিয়াসহ স্থানীয় জাতের মাঝারী উচ্চতার বৃক্ষের আচ্ছাদন বা বায়োশিল্ড তৈরি করা যেতে পারে।
    ৪. চতুর্থ স্তরের বায়োশিল্ড: নারিকেলসহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের গাছ
    তৃতীয় স্তরের বায়োশিল্ডের ৭০ ফুট পর আমি নারিকেল গাছসহ স্থানীয় জাতের উদ্ভিদের চতুর্থ স্তরের আবশ্যিক বায়োশিল্ডের প্রস্তাব করছি। নারিকেল গাছ থেকেও বিপুল অংকের অর্থ আয় করা যাবে। যদি আমরা কেবল তিন সারিতেও নারিকেল গাছ লাগাই, তাহলে মোট নারিকেল গাছ লাগানো যাবে প্রায় ৬০ হাজার, যেখান থেকে বছরে আয় হতে পারে ২০ কোটি টাকার বেশি। একইভাবে প্রথম স্তরের বায়োশিল্ড থেকে চতুর্থ স্তরের বায়োশিল্ড পর্যন্ত আবশ্যকীয় চারটি বায়োশিল্ডই বাস্তুশাস্ত্র বা ইকোসিস্টেম ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব সমৃদ্ধ। যেমন সৈকতে শামুক-ঝিনুকের প্রাচুর্য় দেখা দিলে তা থেকে দামী অলংকার ও শো-পিস তৈরি ছাড়াও প্রাণীখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে একটি আদর্শ বায়োশিল্ড তৈরির মাধ্যমে কেবল একটি খাত থেকেই বছরে রাজস্ব আসতে পারে কয়েকশত কোটি টাকা। সেসাথে এ প্রকৃতি ঠিক রেখে এই চার স্তরের বায়োশিল্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চল পর্যটন ও কৃষি খাতে ব্যবহার করা হলে এখাত থেকে আসবে আরো কয়েকগুণ অর্থ। এছাড়া উপকুলীয় লোকালয়গুলো সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ¡াসের ক্ষতি থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকবে।
    বায়োশিল্ডের অন্তবর্তী অংশে ইকো টুরিজম:
    কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের টেকসই জৈব নিরাপত্তার জন্য যে আবশ্যকীয় চারটি বায়োশিল্ড সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর অন্তবর্তী অংশে ইকোটুরিজম সুবিধা গড়ে তোলা যায়।
    যেমন: ১. বায়োশিল্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের মধ্যবর্তী অঞ্চল বা জোয়ারভাটাময় সৈকত পর্যটকদের বিচরণের জন্য, ২. দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের বায়োশিল্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চল বা কেয়া-নিশিন্দার বাগানের সামনে ও সাগরলতার বালিয়াড়ির পেছনের অংশে হতে পারে সর্বোচ্চ ৯ ফুট উচুঁ স্থাপনা (যেমন: তাঁবু), ৩. তৃতীয় ও চতুর্থ বায়োশিল্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বা নারিকেল বাগানের সামনের অংশে সর্বোচ্চ ১৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্থাপনা হতে পারে, ৪. বায়োশিল্ডের চতুর্থ স্থর বা নারিকেল-ঝাউবাগানের পেছনে হতে পারে ক্রমান্বয়ে তিন তলা থেকে ততোর্ধ বহুতল ভবনগুলো। তবে যতদিন না শহরের ভ‚-গর্ভস্থ পানির মজুদের উপর চাপ কমিয়ে ভ‚-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা না যায়, ততদিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ৬ তলার বা ৬০ ফুটের উর্ধে কোন হোটেলের অনুমোদন দেওয়া অনুচিৎ হবে বলে মনে করি।

    আহমদ গিয়াস, গবেষক, বিজ্ঞানী ও সাংবাদিক দৈনিক আজাদী
    কক্সবাজার, ০১৮১৮৭৬৬৭১১।

    Share on facebook
    Facebook
    Share on twitter
    Twitter
    Share on linkedin
    LinkedIn
    Share on whatsapp
    WhatsApp
    Share on email
    Email