

প্রফে, ডা. মোঃ রায়হান ফারুক
গ্রন্থনায়: ইফতি ইসলাম তানজিল
শোন সবাই, আমি ‘সাহেদুল আলম কাদেরী টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল বলছি। তোমরা কি আমার সাথে পরিচিত হতে চাও? তবে
শোনো আমার ইতিহাস । সে অনেক বড় ইতিহাস, প্রায় একযুগ আগের কথা, ২০০২ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখ আমার জন্ম।
আমার জন্ম হয়েছিল কয়েকজন নামিদামী মানুষের হাতে, যেমন- তৎকালীন চট্টগ্রাম সরকারী ভেটেরিনারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ স্যার, মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ এম এ মতিন প্রধান স্যার, প্রফেসর ডঃ আশিকুর রহমান স্যার, তৎকালীন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ এ.কে.এম. সাইফুদ্দিন স্যার। আর যিনি লাল ফিতা কেটে আমার জন্য আকর্ষণীয়ভাবে উদ্বোধন করলেন তিনি হলেন সবার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং “দৈনিক পূর্বকোণ” পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি এবং মরহুম আলহাজ্ব মোঃ ইউসুফ চৌধুরী, আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন।
আমার জন্যের পর থেকে আমাকে লালন পালন করেছে মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগ। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত আমি কোনো পরিচালকের অধীনে ছিলাম না। কিন্তু আমার জন্মের এক বছর পরই “মোবাইল বা স্যাটেলাইট ভেটেরিনারি ক্লিনিক” এর মাধ্যমে প্রাণি সেবা জনগণের দ্বারে পৌঁছানো হয়েছে। ঐ সময় কর্ণেলহাট, সীতাকুণ্ড, পটিয়া উপজেলার শিকলবাহার চরলক্ষ্যা, কলেজবাজার এসব পয়েন্টে একজন সম্মানিত মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শেষ বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল যা অধ্যাবধি বহাল রয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে সীতাকুন্ডে একটি এবং মিরসরাইয়ে একটি “কমিউনিটি বেজড ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু রয়েছে।
এবার আসা যাক, আমার সমস্ত সম্মানিত পরিচালক (ভেটেরিনারি ক্লিনিক) দের কথায়। আমার প্রথম পরিচালক ছিলেন শ্রদ্ধের ডাঃ মোঃ রায়হান ফারুক স্যার। উনি ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং উনিই প্রথম এই হাসপাতালে প্রাণির রেজিস্টশন ফি (নামমাত্র) চালু করেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গৌরবময় ইতিহাস হয়ে থাকবে। রায়হান স্যার ২০০৯ সালের ১ লা মার্চ মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় দায়িত্বে চলে যান এবং শ্রদ্ধের শিক্ষক ডঃ এ.কে.এম. সাইফুদ্দিন স্যারকে পরিচালকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। শ্রদ্ধের সাইফুদ্দিন স্যার দীর্ঘদিন (১-৩-২০০৯ হতে ২৫-০৬-২০১৩ পর্যন্ত) আমার পরিচালক ছিলেন। উনি আমাকে একটি আধুনিক হাসপাতালে পরিণত করেন যা চোখে পড়ার মত। আমি হলাম বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য ভেটেরিনারি প্রতিষ্ঠান হতে ইন্টার্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা হাতে কলমে শিক্ষার জন্য আসে। এইতো কিছুদিন হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সাইন্স অনুষদের ৮টি গ্রুপে ৫৬ জন ছাত্র-ছাত্রী তাদের ইন্টার্ণ অনুষ্ঠান সমাপ্ত করলো।
এখন আমার পরিচালক হচ্ছেন শ্রদ্ধের ডঃ ভজন চন্দ্র দাস। তবে আমি পরিচালক ছাড়াও মেডিসিনও সার্জারি বিভাগের সকল সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী, অত্র হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ আব্দুল মান্নান স্যার ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে আমাকে আধুনিক রূপ দেয়ার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আমার নামকরণের ইতিহাস খুবই করুণ কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ। চোখে পানি আটকে রাখতে পারছি না। জনাব সাহেদুল আলম কাদেরী চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বর ২৭ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন। ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিন্তু এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর নামের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ১৩ তম সিন্ডিকেটে আমার নামকরণ হয়েছে “সাহেদুল আলম কাদেরী টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল”। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসীব করেন। অনেক কথা বলে ফেল্লাম। কারও মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকলে নিজ গুনে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সকল প্রাণিকূলের সেবা দিয়ে যেতে পারি আমরণ। আল্লাহ হাফেজ।
লেখকঃ অধ্যাপক,
মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।