ডেইরি, পোল্ট্রি,মৎস্য ও কৃষিবিষয়ক অনলাইন নিউজ ও ভিডিও পোর্টাল

সর্বশেষ :

    ডায়াবেটিক রোগীর ব্যায়াম

    ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

    ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ব্যায়াম করাটা ওষুধের চেয়েও অনেক উপকারী। এতে বেশ ভালোভাবেই গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

    ব্যায়ামে শক্তি খরচ হয়, যাতে ওজন কমে। এতে প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে ইনসুলিন তৈরি বৃদ্ধি পায়। ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ায় ব্যায়াম। ফলে শরীরে অল্প যা ইনসুলিন তৈরি হয়, তাতেই গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্যায়ামের ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

    ব্যায়াম করলে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে এবং খারাপটা (LDL) কমে। উচ্চ রক্তচাপ কমে। দুশ্চিন্তা দূর করে মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে ব্যায়াম। ঘুমও ভালো হয়। এটি হাড় ও হৃৎপিণ্ড শক্তিশালী করে। হাড়ের জোড়াগুলো সচল রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

    ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ব্যায়াম
    অ্যারোবিক ব্যায়াম : হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং, বাইসাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা অ্যারোবিক ব্যায়াম। এগুলোতে মাংসপেশি অনেকক্ষণ সচল থাকে। শক্তি ক্ষয় হয় বেশি। এ ব্যায়ামে নাড়ির গতি, শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ে।

    স্ট্রেনদেনিং ব্যায়াম : মাংসপেশির শক্তি বাড়ায় এ ব্যায়াম। ওজন তোলা বা স্প্রিং টানা এ ধরনের ব্যায়াম। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ব্যায়াম শুরু করা যাবে না।

    স্ট্রেচিং : মাংসপেশি এবং হাড়ের জোড়ার জড়তা কাটিয়ে সচল করাই হলো এ ব্যায়ামের উদ্দেশ্য। অ্যারোবিক ব্যায়াম শুরুর আগে স্ট্রেচিং করা উচিত।

    ব্যালান্সিং ব্যায়াম : ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যায়াম এটি। যেমন, এক পায়ের ওপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এ ধরনের ব্যায়াম রোগীর ভারসাম্য বাড়ায়।

    সপ্তাহে কয়দিন ও কতক্ষণ
    সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন এবং দিনে ৩০ মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম সুফল বয়ে আনে। একনাগাড়ে ৩০ মিনিট ব্যায়াম না করতে পারলে ১০ মিনিট করে দিনে তিনবার ব্যায়াম করলেও হবে। প্রতিদিন তিনবার খাওয়ার আগে ১০ মিনিট করে ব্যায়াম করা যেতে পারে।

    ব্যায়াম শুরু করতে কোনো সমস্যা নেই, তবে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কোনো জটিলতা আছে কিনা তার জন্য ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভালো।

    ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়বে। প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে বাড়িয়ে সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ মিনিট হবে।

    ব্যায়ামের শুরুতে ওয়ার্মআপ ও স্ট্রেচিং করে নিতে হবে। হুট করে না থামিয়ে শেষ পাঁচ মিনিট আস্তে আস্তে কমিয়ে ব্যায়াম করা থামাবেন।

    কখন ব্যায়াম করবেন না
    এটা নির্ভর করবে আপনার দৈনন্দিন কাজ, খাবারের সময়, কখন কী ওষুধ খাচ্ছেন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ইত্যাদির ওপর।

    রক্তে খাওয়ার পর গ্লুকোজের মাত্রা ৩০০ মিলি গ্রাম বা খালি পেটে ২৫০ মিলি গ্রামের ওপর থাকলে ব্যায়াম করবেন না। খাওয়ার পরপরই ব্যায়াম করবেন না। রোদের মধ্যে ব্যায়াম করবেন না। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শরীর থেকে পানি বেরিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ভোরে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা উত্তম।

    জোরে হাঁটা উৎকৃষ্ট ব্যায়াম। তবে হাঁটুতে যদি অস্টিওআর্থ্রাইটিস থাকে বা নার্ভের ক্ষতির কারণে পায়ে অনুভূতি কম থাকলে এটা করা যাবে না। আরামদায়ক জুতো ও সুতির মোজা ব্যবহার করবেন। হাঁটার পর যদি ফোসকা, ব্যথা বা পা লাল হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

    ব্যায়ামের কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়া
    আপনি যদি ইনসুলিন নেন এবং সালফোনিউরিয়া বা মেগ্লিটিনাইড ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তবে ব্যায়ামের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বিপজ্জনক হারে কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এর লক্ষণ হলো—মাথা ঘোরা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধা লাগা, দুর্বল লাগা, ঘাম হওয়া ইত্যাদি।

    বায়াম শুরু করার আগে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নেবেন। ১০০ মিলিগ্রামের নিচে হলে কিছু খেয়ে নেবেন। যদি ইনসুলিন নেন তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। ব্যায়াম করার সময় পকেটে গ্লুকোজ, চিনি বা মিষ্টি ফলের রস রাখবেন। খারাপ লাগা শুরু হলেই খেয়ে নেবেন।

    যদি অনেকক্ষণ ব্যায়াম করতে হয় তবে ব্যায়াম শেষ করার আগেও কিছু খেয়ে নিতে পারেন। ব্যায়াম শুরুর আগে, ব্যায়াম করার সময় বা পরে পানি খাবেন। ব্যায়ামের শেষে আবার গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। কী পরিমাণ ব্যায়াম কতটুকু গ্লুকোজ কমায়, সেই ধারণা পাবেন।

    লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

    Share on facebook
    Facebook
    Share on twitter
    Twitter
    Share on linkedin
    LinkedIn
    Share on whatsapp
    WhatsApp
    Share on email
    Email